উচ্চশিক্ষায় দেশের বাইরে আবেদনে পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজনীয় তথ্য

প্রতিকী ছবি
বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে আসে তাদের আশি শতাংশই পিএইচডি প্রোগামে কিংবা এমএস প্রোগামে। তবে এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদেরই কেবল জয়জয়কার। বর্তমানে কিছু কিছু আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগামেও শিক্ষার্থীরা আসছে।
লক্ষ্য:
এই শব্দটির গুরুত্ব আমার কাছে সবচেয়ে বেশি কারণ লক্ষ্য ছাড়া কোন গন্তব্যই মজবুত হয় না কিংবা হতে পারে না। তাই যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে আগ্রহী কেবল লক্ষ্যভেদীরাই তাদের ন্যায্য অধিকারটুকু আদায় করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মনে শঙ্কা বিরাজ করে। তৃতীয় বর্ষ পাশ করার পর এই চিন্তাটি মস্তিষ্কের সর্বত্র সিগন্যাল দেয় যে এইদেশে চাকরি নাই, এতো পড়াশোনার দরকার কি ইত্যাদি।
ফলাফল:
মাত্র বছর কয়েক আগেও একটা প্রচলিত ধারণা ছিল যে, যারা আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে ভাল ফলাফল করে, বিদেশী শিক্ষা কেবল তাদের জন্য। কিংবা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পিএইচডি গ্রহণ কেবল তাদেরই মানায়।
কিন্তু বর্তমানে এই বদ্ধমূল ধারাগুলোর পরিবর্তন এসেছে। আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ের ফলাফল বিদেশী শিক্ষা গ্রহণের আর মানদন্ড নয়। নিজের ভিতর ডুবে থাকা সম্ভাবনাময় সেই শক্তিটি কেবল এই পথটি উন্মুক্ত করছে। কাজেই সিজিপিএ কে কতদূর এগিয়ে তা এখন মূখ্য বিষয় নয়। তবে ইউরোপের কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সিজিপিএ নির্ধারণ করে দেয়।
গবেষণা:
পিএইচডি যারা করতে চান, তাদের জন্য গবেষণাপত্রটি থাকা জরুরি। সুতারাং বাংলাদেশে মাস্টার্স করে যারা বাইরে পিএইচডি করতে আগ্রহী তাদের জন্য এই থিসিস জিনিসটি থাকা আবশ্যিকই বটে। তবে যাদের থিসিস নেই তারা দেশে মাস্টার্স করার পরও বাইরে মাস্টার্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার থিসিসের কোন মূল্য নেই।
আর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে যদি গবেষণা করতে সুযোগই না পায় তাহলে সেই জ্ঞান অর্জন অতৃপ্ত থেকে যায়। যেহেতু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্নাতকে গবেষণা করার সুযোগ নেই সুতরাং মাস্টার্স পর্যায়ে যেসব শিক্ষার্থীরা গবেষণা (থিসিস) করতে আগ্রহী তাদের প্রত্যেককে সেই সুযোগ দেয়া উচিত।
ইংলিশ স্কোর:
বিদেশী শিক্ষায় এই জিনিসটি সিজিপিএর চেয়ে বেশি মূল্যবান। টোফেল, আইইএলটিএস, টোয়েক একজন শিক্ষার্থীর বিদেশী শিক্ষা গ্রহণের মানদন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং যারা বাইরে পড়াশোনা করতে আগ্রহী তারা সিজিপিএ নির্ভর না হয়ে ইংলিশ স্কোর বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দিন। বর্তমানে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজী স্কোর নির্ধারণ করে দেয়। সেই ক্ষেত্রে নিজেদের কাঙ্খিত দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী ইংলিশ প্রোফিয়েন্সি টেস্ট দেয়া প্রয়োজন।
এই স্কোর থাকলে যেকোন শিক্ষার্থী তার সিজিপিএ বেশি হোক আর ৩ এর নিচে হোক সে স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। টোফেলে ৬৫, আইইএলটিএস ৫.৫, টোয়েকে ৫৫০ কে মাধ্যম স্কোর ধরা হয়। তবে ভালস্কোর অবশ্যই ভাল কিছু দেয়। তাই আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে যারা এখনো আছেন, তারা সিজিপিএ কে মূখ্য না করে ইংরেজিতে দক্ষতটা বাড়িয়ে নিন।
https://www.ted.com এ গিয়ে লেকচারগুলো শুনতে পারেন। এই জিনিসটি ইংরেজি শিক্ষায় বেশ কাজে দেয়।
স্কলারশিপ/নন-স্কলারশিপ:
বাইরে এমএস/পিএইচডি করার জন্য এই দুইটি শব্দ গুরুত্বপূর্ন। স্কলারশিপ আসলে দুই ধরনের।
১. সরকারি স্কলারশিপ
২. ব্যক্তিগত/প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রীক নন-স্কলারশিপ
দেশের বাইরে যারা শিক্ষা গ্রহণ করছে তারা কেউ সেই দেশের সরকার/ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক স্কলারশিপের অর্থ পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে। কমনওয়েলথ, ডাড, বিকে-২১, মনবসু সহ বেশ কিছু সরকারি স্কলারশিপ জনপ্রিয় হলেও সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকদের নিজস্ব ফান্ড কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া অর্থ অনেক সময় সরকারি স্কলারশিপের চেয়ে বেশি হয়। সুতরাং এই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে সুযোগ পাওয়ার গুরুত্বটাকেই মূখ্য করা উচিত।
গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে
অধ্যাপক (সুপারভাইজার) অনুসন্ধান:
বিদেশে একজন পূনাঙ্গ অধ্যাপকের ক্ষমতাই সবকিছু। তিনি যা করেন সেটি আইনে পরিনত হয়। তাই স্কলারশিপ পেতে হলে সুপারভাইজার বা অধ্যাপকের অনুসন্ধান ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই। একজন সুপারভাইজার যখন পেয়ে যাবেন তখন মনে রাখবেন আপনার সুযোগ ৯৫ শতাংশ হয়ে গেছে। আর এই কঠিন জিনিসটি পাওয়ারও জন্য বেশ কিছু নিয়মাবলী তুলে ধরছি। যদিও বিষয়টি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ কার্যকরী।
অধ্যাপকদের ই-মেইল আইডি হলো অধ্যাপকদের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। তাই এই ই-মেইল আইডিটি আপনি বিভিন্ন ভাবে পেয়ে যাবেন। আমার দেয়া দুইটি কৌশল অনুসন্ধান করলে আপনাদের অন্য কোন নিয়ম অনুসরণ করতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। অধ্যাপকদের ই-মেইল আইডি সাধারনত জার্ণাল পেপারগুলোতে থাকে।
১. সেই অনুযায়ী ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন হচ্ছে তথ্যভন্ডার। এই ওয়েব সাইটে পাবমেডে গিয়ে পেয়ে যাবেন অধ্যাপকদের ঠিকানা ওই ই-মেইল আইডি।
২. প্রথমে এই http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/ লিংকে গিয়ে উপরের দিকে সার্চ অপশন পাবেন। সেখানে গিয়ে নিজের কাঙ্ক্ষিত শব্দটি দিয়ে নিমিষে পেয়ে যাবেন কয়েকশ জার্ণাল। ধরুন আপনার সাবজেক্ট জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং। এই ক্ষেত্রে আপনি জেনেটিক্সের কোন টপিক দিয়ে দিলে অনেকগুলো জার্ণাল পেয়ে যাবেন। অথবা আপনি ইচ্ছে করলে আপনার কাঙ্ক্ষিত দেশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লিখেও সার্চ দিতে পারেন।
৩. এবার একেকটি জার্ণাল পেপার খুলুন। মুল শিরোনামের পরে ‘অথর ইনফরমেশন’ নামে একটি অপশন আছে সেখানে গিয়ে দেখুন, যে করেসপন্ডে্ন্ট অথরের ই-মেইল আইডি দেয়া আছে।
৪. এই পেপারগুলোতে শুধুমাত্র আবস্টাক্ট থাকে। অনেক সময় ই-মেইল আইডি নাও থাকতে পারে তবে এই ক্ষেত্রে ডানদিকে ফুলটেক্সট অথবা ফ্রি টেক্সেট নামে পিডিএফ অপশন আছে। ও্ই মুল পেপারে অবশ্যই ই-মেইল আইডি পাওয়া যায়।
এই ভাবে এই মেইল আইডি সংগ্রহ করে প্রফেসরদেরকে ইমেইল করা শুরু করুন।
শিক্ষা সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়মিত পেতে রেজিস্ট্রেশন করুন অথবা Log In করুন।
Account Benefitযেহেতু বিদেশী শিক্ষা ব্যবস্থা গবেষণা ভিত্তিক। সেহেতু প্রফসেরদের ল্যাবের ঠিকানা পেতে গেলে আর একটি সহজ অপশন হচ্ছে, আপনি গুগলে গিয়ে সার্চ অপশনে লিখে ফেলুন, ল্যাবরেটরির নাম।
ধরুন আপনি পদার্থ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। এই ক্ষেত্রে লিখতেই পারেন কোয়ান্টাম ল্যাবরেটরি। আমি যে বিষয়টি বলতে চাচ্ছি তা হলো, আপনার বিভাগের সাবজেক্টর মূল কয়েকটি শব্দ লিখে সাথে ল্যাবরেটরি লিখুন। যেখবেন সরাসরি ল্যাবের ঠিকানা চলে আসতেছে। আর ল্যাবের ঠিকানা পেলে সেখানে গিয়ে দেখুন মেম্বার নামে একটি অপশন আছে, যেখানে প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগের জন্য ই-মেইল আইডি দেয়া আছে।
তৃতীয় অপশনটি জটিল, কিন্তু কাজে দেয়। এই ক্ষেত্রে অধ্যাপক ম্যানেজ করতে আর একটি অপশন রয়েছে। তবে এইটি অনেক সময়সাপেক্ষ। আপনি এই লিংকে গিয়ে পেয়ে যাবেন পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা। http://www.4icu.org/ আপনি লিংকে গিয়ে আপনার মহাদেশ অনুযায়ী আপনার কাংক্ষিত দেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংক পেয়ে যাবেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংকে গিয়ে সেখানে দেখুন, ফ্যাকাল্টি, ডিপার্টমেন্ট অপশন রয়েছে। ওই অপশনে গিয়ে ক্লিক করতে পেয়ে যাবেন বিস্তারিত তথ্য। অনেক সময় প্রফেসরদের ল্যাব ঠিকানা পাওয়া যায়। আর সেখানে গিয়ে খুঁজে নিন অধ্যাপকদের এই মেইল আইডি।
মোটিভেশন লেটার ও বায়োডাটা:
ই-মেইল আইডি পাওয়ার পর যে জিনিসটি সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো একটি মোটিভেশন লেটার। একজন প্রফেসরকে ম্যানেজ করার জাদুমন্ত্রটি হলো একটি সুন্দর মটিভেশন লেটার। এই পত্রটির ভাষায় বলে দিবে আপনি কেমন, আপনার মেধা-মনন সব কিছু ফুটে উঠবে। কারণ মনে রাখবেন, আপনি প্রফেসরকে দেখনেনি এমনকি প্রফেসরও আপনাকে দেখেনি। সুতরাং আপনাদের দুইজনের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করার হাতিয়ার এটি। এই দুরুহ কাজটি করার অভিপ্রায় নিজে নিজে নিয়ে ফেলুন।
সেখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করবেন যে, আপনার বর্তমান পড়াশোনার অবস্থা, গবেষণার অবস্থা, ভবিষৎ ইচ্ছা, আপনি কেন সেই প্রফেসরকে পছন্দ করেন। এই জন্য আমার পরামর্শ থাকবে গুগলে গিয়ে ডেমো দেখে নিতে পারেন। আর বায়োডাটা অবশ্যই বিজ্ঞান সম্মত হতে হবে। চাকুরির বায়োডাটা আর স্কলারশিপে বিদেশে পড়াশোনার বায়োডাটা কখনো এক হতে পারে না।
এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত ছাড়াও আপনার কোন সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশ গ্রহণ করা থাকলে সেই সেমিনারগুলোর টাইটেলও যোগ করতে পারেন। তবে অভিজ্ঞতার অপশনে অবশ্যই আপনি যেসব ব্যবহারিক পড়াশোনার অংশ বিশেষও তুলে ধরতে পারেন। মোট কথা বায়োডাটা অবশ্যই গবেষণা করার কিছু নমুনা তুলে ধরা যেতে পারে।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো যে, সব প্রফেসর আপনার ই-মেইলের উত্তর দেয় না। কয়েকশ মেইল দিলে হয়তো ৩/৪ টির উত্তর মেলে। সুতারাং হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আপনি ই-মেইল করতে থাকুন দেখবেন ঠিকই আপনার কাংক্ষিত স্বপ্নটি এসে হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে। প্রফেসররা অনেক সময় কিছু অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেয়। অনেক সময় আপনার ই-মেইলে পজেটিভ উত্তর দেয়ার পর আপনাকে অপশন দিতে পারে, তুমি আমার এই আর্টিকেলের সারমর্ম করে পাঠাও এরপর আমি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে মৌলিক ভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সে দেশের সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন বৃত্তি সম্পর্কে জানতে হলে এখানে ভিজিট করুন।
- মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ
- এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট কোর্স- ইংলিশ, চাইনিজ, আরবি, ফ্রেঞ্চ
- বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-বিজ্ঞপ্তি
- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর
- খুবির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন ২২ ডিসেম্বর
- জবির সমাবর্তন ১১ জানুয়ারি
- জবিতে শূন্য আসনে ভর্তির সাক্ষাৎকার শুরু ২০ ডিসেম্বর
- রাবিতে আন্তর্জাতিক ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন শুরু বৃহস্পতিবার
- অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ১৩ জানুয়ারি; মাস্টার্স রিলিজ স্লিপ আবেদন শুরু ১৯ ডিসেম্বর
- ডিজিটাল মেলা-২০২০ উপলক্ষে টেলিকমিউনিকেশন দফতরের রচনা প্রতিযোগিতা
- ঢাকা পলিটেকনিকে জানুয়ারি-জুন’২০ সেশনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি শুরু
- জেএসসি-পিইসির ফল বছরের শেষ দিন
- ৪০তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষা ৪-৮ জানুয়ারি
- তিতুমীর কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের নিবন্ধন শেষ আজ
Submit Your Comments: