ফল পুনর্নিরীক্ষন: নম্বর গণনায় প্রচুর ভুল; পুনর্মূল্যায়নই হয় না

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড

এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় উত্তরপত্রের নম্বর গণনাতেই অসংখ্যা ভুল ধরা পড়েছে। উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে ভুলের বিষয়টি আরও দীর্ঘ হতো বলে মনে করেন শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা। কেবল ঢাকা বোর্ডে এসএসসি ও এইচএসসিতে তিন বছরে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৩ লাখ ফল, পরিবর্তন ৯.৮৩১।

শুধুমাত্র চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় সারা দেশে ৪ হাজার ৩১২ জন শিক্ষার্থী নম্বর গণনায় ভুলের শিকার হয়, যা তাদের পুনর্নিরীক্ষণ আবেদনের পর সংশোধন হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪৭ জন নতুন করে ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছে। এমনকি ৬১৯ জন একেবারে অনুত্তীর্ণ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে।

গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু করেছে। শুধুমাত্র ঢাকা বোর্ডেই এ আবেদন জমা পরেছে ৫২ হাজার ৯০০ শিক্ষার্থীর।

বোর্ডসূত্রে জানা যায়, আবেদন করা শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে শুধু প্রাপ্ত নম্বরে ভুল আছে কিনা তা দেখা হয়। অনেকসময় দেখা যায়, পুনর্নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং খরচের কথা ভেবে শিক্ষার্থীরা সন্দেহ-সংশয় নিয়েও আবেদন করে না। সেক্ষেত্রে পুনর্নিরীক্ষণ এর সুবিধা সব শিক্ষার্থী পাচ্ছে এমনটাও নয়। ফলাফলে হয়তো ভুল থেকেই যাচ্ছে।

উত্তরপত্রে যোগ বিয়োগের ভুল প্রতিবছর অব্যাহত থাকায় পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষকগণের অধিকাংশদের মতে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে অনেক শিক্ষার্থীরই ফেল থেকে পাস উঠে যায় এবং গ্রেড পরিবর্তনেরও সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে যেহেতু বোর্ড থেকে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই তাই শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে।

বিগত তিন বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পুনর্নিরীক্ষণে ভুল কমছেই না। গত তিন বছরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৪৮৩ জন শিক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে। এদের মধ্যে ৯ হাজার ৮৩১ জন শিক্ষার্থীর ফল পুনর্নিরীক্ষনে পরিবর্তন হয়েছে। যার গড় হিসাব আবেদনকারীর তিন দশমিক ১৭ শতাংশ। সংশোধিত ফলে দেখা যায়, এদের মধ্যে এক হাজার ১৮৭ জন শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ ৫ পায় এবং এক হাজার ৩৯৯ জন শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে।

শিক্ষা সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়মিত পেতে রেজিস্ট্রেশন করুন অথবা Log In করুন।

Account Benefitএদিকে, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক এবং বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের পাশাপাশি পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। যেহেতু শিক্ষকদের অনেক খাতা দেখতে হচ্ছে সেক্ষেত্রে তারা যদি কখনো কোনো সঠিক প্রশ্নের উত্তরেও শূণ্য দিয়ে দেয় তা যাচাইয়ের উযোগ নেই। বর্তমানে যে পুনর্নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে তাতেও শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট আবেদন ফি দিয়ে যোগ বিয়োগে ভুল হয়েছে কিনা দেখা হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় খাতা পরিদর্শকের ভুল থাকে, তবু ফি দিয়ে আবেদন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

গত ১৭ জুলাই (বুধবার) এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি সাংবাদিকদের বলেন, উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভুল কখনোই কাম্য নয়। ভুল যাতে না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তবে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে আইন সংশোধনের সুযোগ নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসম্মত পরীক্ষকের ঘাটতির কারনে এ ধরনের ভুল প্রতিবছরই ঘটছে। শিক্ষা বোর্ডের অনেক কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে আলাপকালীন বলেন, এখন প্রতিবছরই পরীক্ষার্থী বাড়ছে, তবে এর সাথে লাখ লাখ উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য মানসম্মত পরীক্ষক বাড়ছে না। বরং পরীক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া মাত্র ১৫ দিনে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হয়। এতে তাড়াহুরায় ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে। এছাড়া পরীক্ষকদের গাফিলতি তো রয়েছেই। এসব কিছুর মাশুল শুধু শিক্ষার্থীরাই গুনছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।